Wednesday, June 26, 2013

২৮ জুন শাহবাগে সংঘর্ষের আশঙ্কা বিভক্ত গণজারণ মঞ্চ, আসছে ‘বিচ্ছু বাহিনী’

বিভক্ত হয়ে পড়েছে শাহবাগের সরকার সমর্থক গণজাগরণ মঞ্চ। দীর্ঘদিনের চলা আন্দোলনে ছোট ছোট যেসব গ্রুপ ও সংগঠন যোগ দিয়েছিল তারা এখন বিভক্ত হয়ে নতুনভাবে শুরু করতে যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন।

এই গ্রুপ ও সংগঠনগুলো সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ডা. ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্ব আর মানতে চাইছে না। তাদের অভিযোগ, ইমরান ও গণজাগরণ মঞ্চের মূল নেতারা সরকারের স্বার্থ রক্ষার্থেই কাজ করে যাচ্ছে।

নতুন করে আন্দোলন সৃষ্টির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নিজেদের ‘বিচ্ছু বাহিনী’ নাম দিয়ে আগামী ২৮ জুন শাহবাগে মানববন্ধন ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এতেই স্পষ্ট হচ্ছে জাগরণ মঞ্চের বিভক্তি।

অপরদিকে, ‘বিচ্ছু বাহিনী’কে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে ডা. ইমরান এইচ সরকারের অনুসারিরা। ইমরানের অন্যতম ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ব্লগার অমি রহমান পিয়াল তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে রীতিমতো হুমকি দিয়েছেন বিভক্ত অংশকে।

পিয়ালের কিছু মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ২৮ জুনের কর্মসূচিতে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে পিয়াল কয়েকটি পোস্ট দিয়েছেন তার ফেসবুকে।

মঙ্গলবার তিনি লিখেছেন, ‘একটা কথা পরিষ্কার করা জরুরি, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা ও ট্রাইব্যুনালের কাজ নির্বিঘ্নে চলার জন্য শাহবাগে যে জাগরণের সূচনা তা ব্লগার-অ্যাকটিভিস্ট ও ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্বের সমন্বয়ে গঠিত গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। এখানে কোনো একক সিদ্ধান্তের ক্ষমতা নেই কারও, এমনকি খোদ ইমরান এইচ সরকারও কারও সঙ্গে আলোচনা না করে এবং সবার সম্মতি ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণার অধিকার রাখে না। সবার সম্মতিতেই আপাতত জনসমাবেশ স্থগিত রেখে মূল নেতৃত্ব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং তা এখনও বজায় আছে। গণজাগরণের প্রতিটি সমাবেশ এখন কর্মসূচি ভিত্তিক, এই মুহূর্তে যেমন বিভিন্ন জেলায় কর্মী সম্মেলন চলছে।

তাই ঘোড়া ডিঙ্গিয়ে ঘাস খাওয়া চলবে না এবং মঞ্চ অননুমোদিত কোনো সমাবেশ এবং এতে কোনো ঘটনা দুর্ঘটনার দায়ও মঞ্চ নিবে না। অতএব খিয়াল কইরা...’

পিয়ালের এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করে ফয়সাল সিকদার নামে একজন বলেছেন, ‘এতে কোনো ঘটনা-দুর্ঘটনার দায়ও মঞ্চ নিবে না। অতএব খিয়াল কইরা...’ তার মানে আপনারা দুর্ঘটনা ঘটানোর জন্য গুণ্ডলীগ রেডি রেখেছেন?’

তানভীর চৌধুরী পিয়েল নামে একজন বলেছেন, ‘মঞ্চ অননুমোদিত... মঞ্চের অনুমতি নিতে হয় কার কাছ থেকে?’


হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু নামে একজন বলেছেন, ‘দেখতে-দেখতে নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। ধর্ম-ব্যবসায়ী রাজাকারদের প্রতিরোধ করতে না পারলে পুরো জাতিকে এর খেসারত দিতে হবে। সদ্য-সমাপ্ত সিটি করপোরেশন নির্বাচন একটি অশনি সংকেত দিয়ে গেল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাঙালি জাতি এরই মধ্যে সীমাহীন দুর্নীতি আর জঙ্গিবাদের কালো অধ্যায়কে ভুলতে বসেছে। মাহমুদুর রহমানের ‘নাস্তিকতার’ ট্যাবলেট এই সহজ-সরল জনগোষ্ঠীকে ধর্মের ঘোর লাগিয়ে আবার সেই অন্ধকার যুগে ফিরিয়ে নিতে বসেছে। মনে রাখবেন, আপনার-আমার ভবিষ্যত চিরকাল এই গ্রাম-গঞ্জের কৃষক-শ্রমিকই নির্ধারণ করে আসছে। আজকে যদি তারা ঘুমের ঘোরে আচ্ছন্ন থেকে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে, তার মাশুল কি হতে পারে একবার চিন্তা করেন। আপনারা গণজাগরণ মঞ্চ করছেন, ব্লগ-ফেবুতে বিপ্লবের বন্যা বসাই দিচ্ছেন, আর ঐদিকে আওয়ামী লীগ ভোটে হেরে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ছে। কি লাভ হইল শেষকালে??? কে করবে যুদ্ধাপরাধীর বিচার??? কে বাঁচিয়ে রাখবে আপনাদের মুক্তচিন্তার পরিসর??’

তিনি আরো বলেন, ‘তাই, আসুন এখন থেকেই আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা জোরদার করি, যার-যার অবস্থান থেকে। প্রত্যেকটি অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দিতে হবে। সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষের কাছে তথ্য-নির্ভর প্রচারণা চালাতে হবে। সঠিক খবরটা পৌঁছে দিতে হবে ঘরে-ঘরে। মনে করিয়ে দিতে হবে বিএনপি-জামাতের দুঃশাসনের দিনগুলোর কথা। উন্নয়ন-অগ্রগতির প্রত্যেকটি দিক তুলে ধরতে হবে মানুষের সামনে।’

তিনি আরো বলেন, ‘তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আসন্ন নির্বাচনের জন্য গ্রহণযোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন করা। এই প্রেক্ষিতে একটা ডাটাবেজ করা লাগবে, গত নির্বাচনের প্রার্থী (বর্তমান এমপি)-দের কার কেমন জনপ্রিয়তা এই মুহূর্তে, তারা জিতে আসার মত অবস্থায় আছে কি-না, অন্যথায় বিকল্প প্রার্থী কে/কারা হতে পারে, ইত্যাদি বিষয়ে বিশদ কাজ করতে হবে এখন থেকেই। জনতার রায়ের উপর আমাদের আস্থা আছে। ইনশাল্লাহ, বাংলার জনগণ নিশ্চই ভুল করবে না। আমরা নির্বাচনে হারবো না, যদি না আমরা নিজেরা বড় ধরনের কোনো ভুল স্ট্র্যাটেজি ফলো করি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সমুন্নত রেখে একযোগে কাজ করলে জয় আমাদের হবেই।’

এর আগে
রবিবার দেয়া একটি ফেসবুক পোস্টে পিয়াল লিখেছেন, ‘…গতকাল বিকালে শাহবাগে বইসা আছি, এমন সময় মোবাইলে নোটিফিকেশন পাইলাম, একজন একটা ইভেন্টে দাওয়াত দিতে চায়। কি ইভেন্ট? ২৮ তারিখ শাহবাগে অবস্থানের। আওলাইলাম, প্রচণ্ড রাগ নিয়া লেখলাম আমরা যারা তাইলে শাহবাগে প্রতিদিন অবস্থান করতেছি আমরা কারা? কিসের জন্য আছি? কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হইয়া গেলো যে নতুন কইরা ডাক পড়লো সমাবেশের। তাও আবার ২৮ তারিখে ক্যান? ক্যানো আম্মার মৃত্যুবার্ষিকী ২৬ তারিখে না!

এর আগে আমি একটা স্ট্যাটাসে প্রকাশ করছিলাম বড় একটা মিডিয়া গোষ্ঠীর অর্থায়নে চিংকু বামরা নতুন কইরা জাগরণের ডাক দিবে, এই মাসের ৩ তারিখ গোলামের রায় হওয়ার সম্ভাবনা মাথায় নিয়া এই ছকটা কষা হইছিল সুবহে সাদিক অফিসে। রাসেল স্কোয়ার কিংবা কারওয়ান বাজারে ওই ডাক দিয়া শাহবাগের নেতৃত্বরে অবাঞ্ছিত ঘোষণার একটা ষড়যন্ত্র নিয়াই একাট্টা হইছিলো তারা, জামাত-শিবির বিএনপির পোলাপাইন সর্বাত্মক সহায়তা দিয়া এই সমাবেশরে বিশাল কিছু বানায়া দিতো। সেইটা মাঠে মারা গেছিলো সময় মতো প্রকাশ কইর দেওয়ায় (আমার ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক এখন পর্যন্ত একটাও মিস করে নাই)। তো ২৮ তারিখ কি সেটারই ইমপ্রোভাইজড সংস্করণ দেখা যাবে? জামাত-শিবির আর তাদের সহায়ক গোষ্ঠীদের শাহবাগে ঢোকানোর জন্য ট্রোজান হর্স সাজতেছে কারা এইসব হঠাৎ চেতনাপ্রাপ্ত নব্য বিপ্লবী! একটু খিয়াল করলেই চিনা যাবে সব কয়টারে। এই সমাবেশ সেই সমাবেশ ডাইকা ড্রেস রিহার্সেল চলতেছে কিছু দিন ধইরা। ওয়াচে আছি কইলাম মামুরা, খিয়াল কইরা। আসলেই মাইরের উপর ওষুধ নাই...’

বিভক্ত তরুণরা ইতোমধ্যে ফেসবুকে একটি ইভেন্ট করে সেখানে ২৮ জুনের সমাবেশে যোগ দিতে নিমন্ত্রণ পাঠাতে শুরু করেছে। তাতে দাবির মধ্যে বলা হয়েছে, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত এবং জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে ২৮ জুন শাহবাগ প্রজন্ম চত্তরে গণ-বিষ্ফোরণ।’

জাগো শাহাবাগ, আবার জাগো নামের এই ইভেন্ট পাতাটিতে বলা হয়েছে, ‘চেতনা কখনো মরে না। আমাদের চেতনাও মর নি; প্রমাণের সময় চলে এসেছে। আসুন শাহবাগে, আবার আমরা প্রমাণ করি আমাদের প্রজন্ম ঘুমিয়ে নেই। আসুন শাহবাগে ২৮ জুন শুক্রবার, বিকেল ৩টায়। জাগো প্রজন্ম, জাগো শাহাবাগ। জয় বাংলা।’

২৮ জুনের সমাবেশ সফল করতে এবং বিভিন্ন মহল থেকে আসা হুমকির বিষয় নিয়ে মঙ্গলবার শাহবাগের ছবির হাঁটে বৈঠক করেছে শাহবাগ আন্দোলনের বিদ্রোহীরা।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সমাবেশ সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। বুধবার একটি লিফলেট বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ওই বৈঠক থেকে।

সমাবেশে যেকোনো ধরনের বাধা আসলে তা প্রতিহত করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে বিদ্রোহীরা। তবে সব কিছুই নির্ভর করবে সমাবেশে কি পরিমাণ উপস্থিতি হয় তার ওপর, এমনটাই বলছে বৈঠকের একাধিক সূত্র।

No comments:

Post a Comment

AddThis

Bookmark and Share
Free links website directory for webmasters.